
আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর এবার ভোটের অধিকার আদায়সহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করবে।
এজন্য নতুন এই জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব আসন ভাগাভাগি কাজ চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে শারদীয় দুর্গাপূজার পর ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারকরা। প্রয়োজনে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে শিগগিরই ঘোষণা করা হবে ‘আন্দোলন এবং নির্বাচনে’র একটি রোডম্যাপ।
এছাড়া বিদেশি কূটনীতিক ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছে নতুন এই জোট। সেখানে জোটের ‘৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য’র প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিনই আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছি। এখন দেখি সরকার কি করে। আমার মনে হয় সরকার এত সহজে আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেবে না। এজন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে হবে। আমার বিশ্বাস মানুষের ঐক্যের কাছে সরকার আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঘরে বসে থাকব না। কর্মসূচি দেব। মানুষকে জাগ্রত করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাব। মানুষকে বোঝাব, এই ঐক্য কোনো ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে নয়। এই ঐক্য জনগণের স্বার্থে।’
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা এবং দফায় দফায় বৈঠক শেষে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের রাজনীতিতে নতুন জোট হিসেবে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং গণফোরামসহ এই জোটে আরও আছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই তারা ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করে। মতদ্বৈধতার কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বাইরে রেখেই গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের পর এখন দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। রোববার তারা একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন। সকালে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার মতিঝিলের চেম্বারে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং গণফোরামের নেতারা বৈঠক করেন। দুপুরে গুলশানে মাহমুদুর রহমানের বাসায় বৈঠক করেন নাগরিক ঐক্যের নেতারা। বিকালে জেএসডি কার্যালয়ে বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যেও আলাপ-আলোচনা করেন। আজ সোমবার রাতে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে সবাই মিলে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘পূজার পর আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে গণসংযোগে বের হব।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে দেখেছি সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয় না। আমাদেরও দেয়নি। আগামীতেও হয়তো দেবে না। তবুও আমরা চেষ্টা করব শান্তিপূর্ণ উপায়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে। সভা-সমাবেশ-গণসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সামনে আমরা আমাদের কথাগুলো তুলে ধরব। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আজ ঐক্যবদ্ধ। আমরা এই ঐক্যকে সুসংহত করতে উদ্যোগ নেব।’
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা নবগঠিত এই জোটের আত্মপ্রকাশের পর সরকারের ভূমিকা কি হয়- তা দেখার জন্য কিছুটা সময় নেয়ার কথা ভাবছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতারা এই জোটের সমালোচনা শুরু করেছেন।
শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সরে দাঁড়ান বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনিও ড. কামাল হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের ইস্যুটিও সামনে নিয়ে আসেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। রবিবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং গণফোরামের নেতাদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়।
সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং গণফোরাম নেতারা বলেন, প্রথম থেকেই নয়া জোট গঠনে বি. চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ ছিল। শনিবার হঠাৎ ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যাওয়া, তখন ড. কামাল হোসেনের তার বাসায় না থাকা এবং এর জের ধরে সন্ধ্যায় বি. চৌধুরীর অনেকটা তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করাটা পূর্বপরিকল্পনারই অংশ।
গণফোরামের এক শীর্ষ নেতা বৈঠকে বলেন, ‘বি. চৌধুরীর এ ধরনের ভূমিকা নতুন নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মহাজোট গঠনের সময়ও তিনি দফায় দফায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে আবার অজ্ঞাত কারণে পিছুটান দেন। এবারও তিন একই কাজ করেছেন।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং গণফোরামের বেশির ভাগ নেতা ভবিষ্যতে বি. চৌধুরীকে ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে পথ চলার প্রস্তাব দেন। এ সময় একজন নেতা জানান, বিকল্পধারা ভেঙে যাচ্ছে। দলটির একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
বৈঠকে আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং এর আগে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ফয়সালা করা নিয়েও আলোচনা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনারও সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় আন্দোলন ও নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও গণফোরামের নেতারা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply