সম্প্রতি আলোচিত হয়েছে অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনাটি। নিঃসন্দেহে এক হৃদয়বিদারক পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। আইন এই বিষয়ে কী বলে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা কীভাবে হতে পারে?
মানুষকে নেতিবাচকভাবে ও মানসিকভাবে আকার-ইঙ্গিত বা কাজের দ্বারা দুর্বল করে তার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন করে তোলা যায়। কোনো মানসিক রোগীকে যদি বোঝানো হয় যে, সে সমাজের পরিবারের বোঝা, তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তার বেঁচে থাকাটা অপ্রয়োজনীয়, তবে তা আত্মহত্যায় প্ররোচনাদায়ক। অমুককে বাঁচানোর জন্য তমুককে বিপদে ফেলে দেয়া প্ররোচনা। তিলে তিলে কারও স্বপ্ন আশা ভেঙে দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা। তীব্র অপমান, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, উত্তেজিত করা কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা।
আইন কী বলে?
বাংলদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী-ব্যক্তির আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা। তবে আত্মহত্যা করতে গিয়ে না মরলে আপনাকে আত্মহত্যা বা নিজেকে ধ্বংস করার অপচেষ্টার অপরাধে এক বছরের জেলে যেতে হতে পারে। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারামতে, যদি আপনি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেন এবং অনুরূপ অপরাধ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন তা হলে আপনার এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে বা উভয় শাস্তিই হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনী বলেন, অরিত্রির আত্মহত্যা প্ররোচনামূলক। কারণ তাকে নকলের অভিযোগে বিকারগ্রস্ত করে, বাবা-মাকে ডেকে অপমান করা, শিক্ষকের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করা, টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত-এসব অরিত্রিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আইন অনুসারে অরিত্রির আত্মহত্যায় তার শিক্ষকদের দায়ী করা যায়। এ ছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন পুরোপুরি বাণিজিকীকরণে পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া শিক্ষকরা কিছু বোঝেন তা। বোর্ডের বইয়ের বাইরে হাইকোর্টের রুল অমান্য করে অনেক বাড়তি বই চাপিয়ে দেয়া হয়, যা গুরুতর অন্যায়। এ ছাড়া বর্তমানে শিক্ষকদের আচরণে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক অত্যাচার করে, যা শিক্ষার্থীরা লজ্জায় বলতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, অরিত্রির এ ঘটনা পুরো বাংলাদেশের চিত্র। অরিত্রির ঘটনা মিডিয়া তুলে ধরেছে, তাই আমরা জানতে পেরেছি। এ রকম হাজারো অরিত্রি এভাবে কলিতেই ঝরে যায়; কিন্তু আমরা জানতে পারি না। এসব আড়ালে থেকে যায়।
সালমা হাই বলেন, শিক্ষার্থীদের এভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকলের অভিযোগ তুলে বাবা-মাকে ডেকে অপমান ও টিসি দেয়ার কথা বলায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শান্তিনগর শাখার নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি (১৫) গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে আত্মহত্যা করে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ সাহাজুল ইসলাম
Leave a Reply