
সম্প্রতি মন্ত্রীসসভায় পাস হয়েছে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকুরির শর্তাবলী) আইন ২০১৮’ । পাস হওয়া এই আইনে গণমাধ্যমে কর্মরতদের সংজ্ঞা, বেতন, কর্মঘণ্টা, সুযোগ-সুবিধাসহ আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধানের কথাও বলা হয়েছে।
আইনে গণমাধ্যমে কর্মরতদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকুশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিতরা হলেন গণমাধ্যমকর্মী। সম্প্রচারকর্মী হলেন, সম্প্রচার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মী।
প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ পেশাজীবীরা যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কলাকুশলী বলা হবে।
সাংবাদিকদের চাকরি আর শ্রম আইনের অধীনে নয়
এই আইনটি এতোদিন ভিন্নভাবে ছিল। দ্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ কন্ডিশন সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৭৪ এই আইনের আওতায় এগুলো চলতো। এটার সঙ্গে শ্রম আইনের ওভারল্যাপিং হয়। সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ডেফিনেশনের মধ্যে শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়েছিল। ওই অংশটি ওখান থেকে বেরিয়ে এখানে এসেছে। শ্রমিক কথাটা থাকবে না।
যারা গণমাধ্যমে কাজ করবেন তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হবেন।
বেতন কিভাবে নির্ধারণ হবে
আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা আছে, এ আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকার গণমাধ্যমের সাথে জড়িত গণমাধ্যমকর্মী ও কর্মচারীদের ওয়েজ নির্ধারণের জন্য প্রজ্ঞাপনমূলে গণমাধ্যমকর্মী ওয়েজবোর্ড গঠন করবে।
১৪ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ওয়েজের নিম্নতর হার সংশ্লিষ্ট সকল গণমাধ্যম মালিকের উপর অবশ্যই পালনীয় হবে।
নোট: সর্বশেষ পাস হওয়া নবম ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন নির্ধারিত হবে।
একবছর চাকরির পর চালু হবে প্রভিডেন্ট ফান্ড
আইন অনুযায়ী, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে। নিয়োগের এক বছর পর থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসিক চাঁদা দিতে পারবেন। আগে দুই বছর চাকরি হলে ভবিষ্যৎ তহবিলে চাঁদা দিতে পারতেন। সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ অর্থ জমা রাখা যেত। মালিককে সমহারে টাকা রাখতে হবে।
সপ্তাহে কাজ করতে হবে ৩৬ ঘণ্টা
নতুন আইনে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে।
ছুটিতে যত সুবিধা
ছুটির বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা হয়েছে এই আইনে। আগে যেটা বছরে ১০ দিনের সিএল (ক্যাজুয়াল লীভ) ছুটি ছিল সেটা এই আইনের ৬ ধারায় বছরে ১৫ দিন ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া অর্জিত ছুটি বছরে আগে ৬০ দিন ছিল সেটা এখন বছরে ১০০ দিন হবে।
এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মী তাদের চাকরির মেয়াদের ১৮ ভাগের ১ ভাগ পূর্ণ বেতনে অসুস্থজনিত ছুটি পাবে। গণমাধ্যমকর্মীরা উৎসব ছুটি পাবেন বছরে সর্বোচ্চ ১০ দিন। প্রত্যেক নারী গণমাধ্যমকর্মী ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী ৩ বছর অন্তর ৩০ দিন শ্রান্তি-বিনোদন ছুটি পাবেন।
নোট: সপ্তাহে ১দিন অবশ্যই ছুটি দিতে হবে প্রত্যেক কর্মীকে (এটা বাৎসরিক ছুটির বাইরে ধরা হবে)।
স্বাস্থ্য বীমা করাতে হবে
৭ ধারায় চিকিৎসা সুবিধার সুবিধার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পাবে মালিকপক্ষ থেকে।
পাওনা আদায়ে আদালতে মামলা করা যাবে
১৬ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে একজন গণমাধ্যমকর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে তবে গণমাধ্যমকর্মী বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
নতুন আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, এটি প্রচলিত বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
আইন ভাঙলে মালিকের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা
আইনের ১৯ ধারায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনে কোনো ধারা বা আইনের অধীনে প্রণীত বিধি লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে জেল দিতে পারবেন আদালত।
সরকার এই আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াসহ যে কোনো পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত যে কোনো সুযোগ-সুবিধা স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবে।
গণমাধ্যমে চাকরি চাকরিবিধি পরিদর্শনে থাকবে কমিটি
আইনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিদর্শন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে, যা এই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এছাড়াও পাস হওয়া এই আইনে কয়েকটি ধারা রয়েছে যেগুলো পালন করতে হবে গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের।
এদিকে, গণমাধ্যমকর্মী আইন হওয়ায় সাংবাদিক সকল সংগঠন সম্মিলিতভাবে আনন্দ সমাবেশের আয়োজন করেছে। এটি হবে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) প্রেসক্লাবে তিনতলায়। অনুষ্ঠানে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত থাকবেন। উক্ত আয়োজনে সকল সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/ আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply