
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়নের সুফল পাওয়ায় জনগণ আবারও নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতির জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পরদিন গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সভায় নির্বাচনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ ও উর্যাবমুখর এবং মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে।’ তিনি বলেন, ‘কোথাও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকলেও নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে।’
এই নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ অহেতুক অভিযোগ করতে পারে বলেও বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। এ জন্য দেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে, নৌকায় রায় দিয়েছে।
নির্বাচনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়ের কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জোট সাতটি আসন পেয়ে তাদের নিজেদের কারণে। নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রধান কে হবেন, তা তারা জনগণকে জানাতে পারেনি। প্রতিবেশী ভারতের দিকে তাকালে দেখবেন, কংগ্রেসও গত নির্বাচনের আগে দেখাতে পারেনি তাদের প্রধান কে হবেন। তারা (বিএনপি-জামায়াত) মানুষকে ওইভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি, ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি তাদের জোটে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছিল। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এ জন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আর বিএনপির মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে দণ্ডিত। তাঁদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।’
মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপির অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। তারা টাকার বিনিময়ে অর্থাৎ যে টাকা বেশি দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দিয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়নি তারা। একেকটা আসনে চারজন, পাঁচজন ও তিনজন করে নমিনেশন দিয়েছে। এতে কেউ আর ওইভাবে মাঠে কাজ করেনি। কে কী করবে, না করবে না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেউ কাজ করেনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন হলে মানুষ চিন্তা করে কে প্রধানমন্ত্রী হবে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট কাউকে সেভাবে জাতির সামনে দেখাতে পারেনি। ফলে তারা ওইভাবে ভোটারদের আকর্ষণও করেতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে কামাল হোসেন খুবই ভালো। কিন্তু তিনি যখন তাঁর দল গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই তাঁর নির্বাচন পরিচালনা করার ভালো অভিজ্ঞতা নেই, জেতারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’
নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিএনপি আমলে দুর্নীতির কথাও তুলেন ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ইত্যাদি কারণে মানুষ তাদের রিজেক্ট করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ করেছি, তারা নির্বাচনী কোনো কাজ করেনি। কয়েকজনের তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও অনেকেই অ্যাক্টিভিটি না করে প্রপাগান্ডা ছাড়া সে রকম কিছু করেনি।’
সভায় নির্বাচন ও জয় পাওয়ার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নির্বাচনটা খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এর আগে কখনো এতটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। এই নির্বাচনে আমাদের জনগণ অবাধে ও ভীতিহীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েছে নির্বাচনে।’
এ সময় আওয়ামী লীগ আমলে দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশজুড়ে অবকাঠামো, কর্মসংস্থান ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিগত বছরগুলোতে মানুষ অধিকতর ভালো জীবন যাপন করেছে। এ জন্য তারা আমাদের ভোট দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষার প্রসার, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছে। এ জন্য তরুণরাও আকৃষ্ট হয়ে আমাদের ভোট দিয়েছে।’
গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নানা বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনী ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য নির্বাচন কমিশনকে একটি সাংবিধানিক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অগ্রসর হচ্ছে। অতীতে মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় বসেছে। বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্ট থেকে। আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা ক্যান্টনমেন্ট থেকে না এসে দেশ পরিচালনা করছি। গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। আমি সব সময়ই চিন্তা করেছি, জনগণ ভোট দিলে (ক্ষমতায়) থাকব, অন্যথায় থাকব না।’
বিরোধীদের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হই তখন সকল মানুষই প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া আমরা দায়িত্ব। ভোটের অধিকার মানুষের, ভোট দেওয়ার সময় মানুষ যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। কিন্তু ভোটের পর সবাই সমান।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, যেন তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, সদস্য ড. গওহর রিজভী প্রমুখ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply