
টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার তারুটিয়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রশীদ মিয়া মাংস দিয়ে ভাত মাখিয়ে চোখে মুখে তৃপ্তি নিয়ে বলছিলেন, ‘আমাগোরে কেউ ডাক দিয়া ভাল-মন্দ খাওয়ায় না। কিন্তু টাঙ্গাইল শহরে একজন গরিবের হোটেল দিছে। আর তার নাম দিছে রবিন হুড। এইহানে খাইতে কোনো ট্যাহা পয়সা নাগে না। ট্যাহা পয়সা ছাড়াই আমাগোর ন্যাগাল গরিব মানুষেরে মাংস দিয়া ভাত খাওয়ায়।’
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের সিডিসি মার্কেটের নিচতলায় ‘গরিবের হোটেল রবিন হুড’ -এ খাওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। তার মতো খেটে খাওয়া অনেকেই এখানে এসেছেন এক বেলা মুরগির মাংস, ভাত ও ডাল খাওয়ার জন্য।
কালিহাতী উপজেলার জোকারচর এলাকার আক্কাস আলী টাঙ্গাইলে পাঁচআনী বাজারে কুলির কাজ করেন। তিনিও এসেছেন গরিবের হোটেল রবিন হুড -এ খাওয়ার জন্য। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ১০ মাস ধরে তিনি এখানে খান। আগে প্রতিদিন সন্ধ্যায় শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ভাত-মাংস খাওয়ানো হতো। তখন আমাদের মতো গরিব মানুষের দুপুরের খাওয়ার টাকাটা অন্তঃত বেঁচে যেত। কিন্তু গত ৫ মাস ধরে শুধু শুক্রবার খাওয়ানো হয়। তাও তারা খুশি, কারণ তাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের অন্ততঃ একবেলা ভাল খাবার জোটে।
দুপুরে গিয়ে সেখানে দেখা যায়, প্রায় দুই শতাধিক গরিব-অসহায় মানুষ রবিন হুড হোটেলে এসেছেন খাওয়ার জন্য। সবার হাতেই রয়েছে ভাত ও মাংসের প্লেট। সবার চোখে-মুখে আনন্দ। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে মার্কেটের নিচতলায় সিঁড়িতে বসে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাদের প্লেট সরবরাহ করছেন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে টাঙ্গাইল শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা নবিন।
তিনি জানান, টাঙ্গাইল শহরের নিরালা হোটেলের মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা রুবোল নিজ উদ্যোগে এই গরিবের হোটেল ‘রবিন হুড’ চালু করেছেন। এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। তাই আমি মির্জা রুবোলের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাকে সবসময় সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এসময় তিনি এই রবিন হুড হোটেলটি যেন আগের মতো প্রতিদিন গরিব মানুষের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে সেজন্য সমাজের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
গরিবের হোটেল ‘রবিন হুড’র উদ্যোক্তা মির্জা রুবোল জানান, আগে থেকেই তার গরিব মানুষের প্রতি দুর্বলতা ছিল। তাই তিনি ১০ মাস আগে তার নিরালা হোটেল থেকে যা আয় হতো তার কিছু অংশ খরচ করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গরিব মানুষদের খাওয়াতেন। প্রথম অবস্থায় ২০/৩০ জনের জন্য হোটেলেই রান্না করা হতো। কিন্তু দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে তিনি ২ লাখ টাকার ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই ১০০/১২০ জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু ৫ মাস ধরে এই হোটেলে গরিব-অসহায় মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ জন। এজন্য প্রতিদিন এত টাকা জোগাড় করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই প্রতি শুক্রবার দুপুরে একবেলা খাওয়ার আয়োজন করেন তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply