
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘূচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মৌসুমে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। নিম্নচাপটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হয়ে রবিবার (১০ জুন) দিনগত মধ্যরাতের দিকে সীতাকুণ্ডের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি ভারি বর্ষণের সাথে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার রাত থেকে হাল্কা থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত আছে । এতে নগরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। রাত দেড়টার দিকে লঘূচাপটি সীতাকুণ্ড উপকূল দিয়ে চলে যাওয়ার সময় সেখানে প্রচন্ড দমকা হাওয়া ঝড় তুফান বয়ে যায়। এতে অসংখ্য ঘর বাড়ি গাছ পালা ভেঙে গেছে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যা থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় এবং পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য বার বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে দুর্ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় গত রবিবার থেকে নগরীর বাটালি হিল, মিয়ার পাহাড়. একে খান ও আমিনজুট মিল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানি জানান, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় মাইকিং করে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু ভারি বর্ষণ হচ্ছে, সেহেতু পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। যেকোন দুর্ঘটনা ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে তাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
সুত্র মতে নগরীর লালখান বাজার, মতিঝর্না, হামজারবাগ নবীনগর পাহাড়, বার্মা কলোনি পাহাড়, এনায়েত বাজার জামতলা বস্তি, পলোগ্রাউন্ড পাহাড়, বাটালী হিল, জিলাপী পাহাড়, নাসিরাবাদ পাহাড়, এ কে খান পাহাড়, চন্দ্রনগর পাহাড়, রউফাবাদ পাহাড়, কুসুমবাগ, জালালাবাদ, সেনানিবাস, বায়েজিদ বোস্তামী, বন গবেষণাগারের পেছনে, খুলশী, ষোলশহর, ফৌজদারহাট, কুমিরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চট্টগ্রামের অধিকাংশ পাহাড়ে বৈধ কিংবা অবৈধভাবে শতাধিক বস্তি গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখ লোক বাস করে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা গেছে।
বিগত ১০ বছরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় ১০টি পাহাড় ধস ও ভূমি ধসের ফলে অন্তত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের সতর্কতা সত্বেও পাহাড় দখল করে ওঠা ঘরবাড়ি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রাম নগরীর ছোট-বড় ১৩টি পাহাড় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
বার বার মাইকিং করে তাদেরকে সরে যাবার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড় ধসসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, ‘গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া উচিত।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মমিনুর রশিদ জানান, ‘চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকার পাহাড়সমূহকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে।’
কিছুদিন পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করা বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযানের পর আবারও সেখানে ফিরে এসেছে অধিকাংশ লোকজন।
প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নগরীর ১৩টি ঝুঁকিপুর্ণ পাহাড় ও টিলার মধ্যে ১১টিতে সবচেয়ে বেশি ৬৬৬ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।
পাহাড় ধ্বস হতাহত রোধ করতে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে সচেতনতা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত অধিবাসিরা যদি নিজেরা সচেতন হয়ে সেই স্থান ত্যাগ করেন তবেই অনেকাংশে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply