
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে উন্নয়নের নামে অনুপযোগী বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নষ্ট করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিকল্পনায় থাকা সত্বেও নিজেদের খেয়াল খুশিমত অনুপযোগী কালভার্ট করে শুধু সরকারের টাকা অপচয়ই নয়, এটি এলাকাবাসীর হিতে বিপরীত হতে চলেছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের পূর্ব বাঁশকান্দা গ্রামের ‘নবাখালি’ খাল। এ খাল ওই গ্রামের মধ্যবর্তী সংযোগ স্থাপনকারী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুরসহ কয়েকটি গ্রামের চলাচলের রাস্তায় অবস্থিত। ফলে ভারি যান চলাচল না করলেও গ্রামীণ যোগাযোগে রাস্তাটির গুরুত্ব কম নয়। কিন্তু গত প্রায় দুই বছর আগে নবাখালিতে স্থাপিত স্টিলের ব্রিজটি ভোগাই নদীর ঢলের তোরে বিধ্বস্ত হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ওই এলাকার মানুষ। ফলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৪৮ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেট সংকুলান না হওয়ায় পরিকল্পনাটি পিছিয়ে যায়।
এদিকে এলজিইডি’র বিলম্ব দেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে স্থানীয়দের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রায় চুয়ান্ন লাখ টাকায় মাত্র ১৫ মিটার একটি বক্স কালভার্ট বরাদ্দ করা হয়। যথারীতি চলতি বছরের শুরুতেই এর কাজ শেষ হলেও বর্ষা মৌসুম চলে আসায় মাটি ভরাটের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফলে মাঝখালেই ঝুলে থাকে কালভার্টটি। বর্তমানে পানির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা কালভার্টটি কোনো কাজেই আসছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদির (৬৫) জানান, আগে স্টিলের ব্রিজটি এর চেয়েও বড় ছিল। এখন এই ছোট ব্রিজ দিয়ে কখনই ভোগাই নদীর ঢলের পানি যাওয়া সম্ভব নয়। কোরবান আলী (৫৬) জানান, ঢলের পানি এলে আশপাশের রাস্তা-ঘাট সব ডুবে যায়। এ ব্রিজের উচ্চতা একেবারেই কম। তার উপর আবার আকারে ছোট। কোনো ভাবেই পানি চলাচল সম্ভব হবে না। গেল বর্ষায় ব্রিজের চারপাশ দিয়ে পানি গেছে।
চাঁন মিয়া (৩৬) জানান, ছোট ও নিচু ব্রিজ করে সরকারের টাকাই নষ্ট করা হয়েছে। এটা আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। উল্টো ঢলের পানি চাপ সইতে না পেরে আশপাশে প্লাবিত হয়ে ক্ষয়-ক্ষতি বাড়াবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার শফিকুল ইসলাম জানান, এলজিইডি ব্রিজ নির্মাণে বিলম্ব করায় এবং কোনো আশ্বাস পাওয়া না যাওয়ায় ত্রাণের ব্রিজটি নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) শেরপুরের প্রকৌশলী জানিয়েছেন, আমাদের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের পরিকল্পনায় এখানে ৪৮ মিটার ব্রিজ ধরা ছিল। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে সেখানে মাত্র ১৫ মিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি আমরা ওই স্থান পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। যা কোনো কাজেই আসবে না। এটা সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
ওই সময় দায়িত্ব পালনকারী নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের সুপারিশের ভিত্তিতে বক্স কালভার্টটি বরাদ্দ করা হয়েছে। দুই পাশে মাটি ভরাট করে দিলে কালভার্টটি কাজে আসবে। বর্ষা চলে গেছে, এখন মাটি ভরাট করে চলাচল যোগ্য করে দেওয়া হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ / কাউসার।
Leave a Reply