
বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর মূল অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। আর পুরো প্রকল্পটির সার্বিক বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশ। এমন সময় প্রকল্পটি নিয়ে দেশব্যাপী গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এমন সময় ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে মাথা লাগার যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে এসব গণপিটুনির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
তবে এই ধরনের গুজব নিয়ন্ত্রণ করা এবং যারা এসব ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম। তার মতে, গুজবের মতো কোনো বিষয় অনলাইন প্লাটফর্মে ভাইরাল হচ্ছে বলে খরব পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করা এবং অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।
বুধবার (২৪ জুলাই) সময় টেলিভিশনের ‘সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠানে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা অনেক আগেই শনাক্ত করা যেত। শনাক্ত করতে দেরি হলেও ‘ইউআরএল’ টা দ্রুত ফিল্টার করা সম্ভব। যখনই জানা যাবে গুজবের মতো কোনো বিষয়কে ভাইরাল করা হচ্ছে তখন সেই মুহূর্তে সেটিকে ব্লক করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কে বা কারা এটি ছড়িয়েছে তাকে শনাক্ত করতে হয়তো সময় একটু বেশি লাগতে পারে। এক্ষেত্রেও সময়টা ১৫ দিন হওয়ার কথা না।
তিনি বলেন, একটি পোস্ট দেশের মধ্যে শনাক্ত করতে গেলে কয়েকটা মাধ্যম জরুরি। মোবাইল টেলিকম অপারেটর। ফেসবুক লিংক অথবা লোকেশন, জিও লোকেশন ধরে ট্রেস করা হয়। দেশের বাইরে গেলে সময় একটু বেশি লাগে। কিন্তু তাতেও সময় খুব বেশি লাগার কথা না। কোথা থেকে পোস্টটি করা হচ্ছে এটি ২-৩ দিনের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব।
বুধবার (২৪ জুলাই) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব সৃষ্টিকারীদের মধ্যে এক ব্যক্তি দুবাইয়ে থাকেন এবং তাকে পুলিশ শনাক্ত করেছে বলেও জানান তিনি। গুজবটা যে প্রথম দুবাই থেকে ছড়ানো হয়েছে এটি প্রশাসনের জানতে সময় লেগেছে ১৫ দিন।
কিন্তু গুজবের উৎস শনাক্ত করতে সময় লাগার কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘এ বিষয়ে শুধু সরকারকে দোষারোপ করলে চলবে না, কেননা বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি অ্যাক্টিভ ফেসবুক ইউজার রয়েছে। এত সংখ্যক মানুষকে মনিটর করার জন্য সরকার কতজনের মনিটরিং সেল নিয়োগ দিয়েছে। সেটি দেখার বিষয়।
গুজবটির ব্যাপকতার কথা উল্লেখ করে এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলছেন, এর পেছনে বড় একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আর সেটি অত্যন্ত সময় নিয়ে করেছে একটি সুনিয়ন্ত্রিত গ্রুপের মাধ্যমে। এটির পরিকল্পনা করতেই হয়তো তাদের বছরখানেক সময় লেগেছে। কিন্তু মনিটরিং যে সেলটি তারা তো হঠাৎ করে এ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। তাই সরকারের একার পক্ষে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই গুজব প্রতিরোধে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটা হতে পারে ওপেন ফ্রিল্যান্সিং এর মতো। যেভাবে ৯৯৯ কাজ করে, ঠিক সেরকম। যেমন একটা ম্যাসেজ সেন্টার থাকবে সেখানে ফেসবুকের সচেতন ব্যবহারকারীরা তারাও যেন ম্যাসেজগুলো দিতে পারে। কেননা ফেসবুকের অনেক ম্যাসেজ যেটা আমার সামনে আসছে সেটা হয়তো অন্যের কাছে যাচ্ছে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে মনিটরিং সেলের কেউ হয়তো ম্যাসেজটা দেখতেই পাচ্ছে না। কারণ কিছু সিক্রেট গ্রুপ ব্যবহার করায় ঠিক মতো মনিটরিং করা সম্ভব না।
গুজব প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বলতে গিয়ে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, গুজবটা ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আর সচেতনতার ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে টেলিভিশনে। তাহলে এক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে যারা গুজবে কান দিচ্ছেন, তারা টেলিভিশন নয় বরং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী। তাই গুজব নিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনও অবশ্যই এই সোশ্যাল মিডিয়াতেই চালাতে হবে। আর এর জন্য অবশ্যই একটা ক্যাম্পেইন বাজেট রাখতে হবে, শুধু মিডিয়ায় কিছু নিউজ করে এটিকে থামানো যাবে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply