
চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাসফিয়ার বাবা মো: আমিন তাসফিয়ার বন্ধু এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদনান মির্জাসহ (১৬) ছয়জনকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ আদনানকে গ্রেফতার করেছে।
তবে এই ঘটনা হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা সেটি নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। এ জন্য পারিপার্শ্বিক আলামত সংগ্রহ, বন্ধু আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে পুলিশ। তবে প্রেমঘটিত কারণেই যে তাসফিয়ার মৃত্যু, তা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তাসফিয়ার বন্ধু আদনান ও তার ছয় সহযোগী তাকে পতেঙ্গার নেভাল এলাকায় নিয়ে হত্যা করেছে। গতকাল তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী ফৌজুল আমিন চৌধুরী বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড কি না আমরা নিশ্চিত নই। এর পরও যেহেতু তার বাবা মামলা করেছেন, আমরা গ্রহণ করেছি।
উল্লেখ্য, ২ মে সকালে নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় চোখ, নাক-মুখ থেতলানো অবস্থায় তাসফিয়ার লাশ পায় পুলিশ। সে কক্সবাজার জেলা সদরের ডেইলপাড়া এলাকার মো: আমিনের মেয়ে। চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডে তাদের বাসা।
আদনানকে বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর নাসিরাবাদ থেকে আটক করেছিল পুলিশ। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম জানান, আগামী ৬ মে আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
পুলিশ জানিয়েছিল, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদনান জানিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাসফিয়া, আদনান ও তাদের এক বন্ধু সোহেল নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে বসে। কিছুক্ষণ পর তাসফিয়ার মা সোহেলকে ফোন করে তাসফিয়াকে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন।
এ সময় তাসফিয়া আদনানের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাসফিয়ার মা আবার আদনানকে ফোন করে তাসফিয়া কোথায় জানতে চান। আদনান তার কথামতো তাসফিয়ার বাসায় যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত আদনান ও তাসফিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। এরপর বুধবার সকালে তাসফিয়ার লাশ পাওয়া যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট চায়না গ্রিল থেকে সিসিটিভির ভিডিওফুটেজ উদ্ধার করা হয়। এতে ওই রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একত্রে বের হতে দেখা যায়। এ সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়।
ওই রেস্টুরেন্টের যে কর্মচারী তাদের আইসক্রিম সার্ভ করেছিলেন তার নাম উজ্জ্বল দাস। তিনি জানান, এ জুটি ২০-২২ মিনিট দোকানে ছিল। তারা দু’টি আইসক্রিম অর্ডার করেছিল। দু’টি আইসক্রিমের দাম আসে ভ্যাটসহ ৩৭৫ টাকা। বিল দিয়ে বের হওয়ার পর ওই টেবিলে গিয়ে তিনি দেখতে পান গ্রাহক আইসক্রিম খায়নি। কিন্তু বিল পরিশোধ করে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রেস্টুরেন্টেই দু’জনের মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছিল। নয়তো অর্ডার করার পরও কেন তারা আইসক্রিম খেলো না।
তাসফিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তার পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হত্যা না আত্মহত্যা তা নির্ভর করছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর। প্রতিবেদন পেলেই এ মৃত্যুরহস্যের জট খুলবে। সে অপেক্ষায় আছে পুলিশ।
এ দিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার ছিনতাইকারীদের হাতে তাসফিয়া নিহত হতে পারে এমন সন্দেহের বিষয়টিও পুলিশের মাথায় রয়েছে। চায়না গ্রিল থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিকশা করে রওনা দেয়ার সময় তাসফিয়ার হাতে একটি দামি মোবাইল ফোন ও স্বর্ণের আংটি ছিল। তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর সেই মোবাইল ফোন ও আংটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, আশাহত মনে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে একাকী সময় কাটাতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের শিকার হতে পারেন তাসফিয়া।
এ দিকে তাসফিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে নগরের মিমি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে রূপনগর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে তারা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply