
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্যে প্রধানত দুই ধরনের প্রাপ্তি রয়েছে। একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। তা ছাড়া এখানে শুধু সরকার টু সরকার নয়, পার্টি টু পার্টি সম্পর্কের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। পাশাপাশি এ সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিরও শুভ সূচনা হয়েছে। যা আগামীতে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত ও সফরসঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সফরসঙ্গী আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো অর্থনৈতিক আর অন্যটি রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক বিষয়। দুই দেশের অথনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে এ সফরে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী চীনের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
তাদের মতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশকে আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট সমাধান করতে বলার পাশাপাশি প্রয়োজনে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চীনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
চীনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আন্তর্জাতিকবিষয়কমন্ত্রী সং তাওও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, চীন রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায়। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই এ সংকটের সমাধান। এ সময় সিপিসি মিনিস্টার প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানের বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুকি এবং মিয়ানমারের অন্য নেতাদের সঙ্গে তার দলের আলোচনার বিষয়ে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য মো. জমির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের একটা বড় অর্জন হলো চীন রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করবে এমন আশ্বাস দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার কথাও বলেছেন। এটি এ সফরের একটি বড় অর্জন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছিল বিশেষ করে বিএনপি বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন, এখানে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা কি দেখলাম। প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশটির প্রধানমন্ত্রী নয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট এমনকি সিপিসি নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আর চীন প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেমন গুরুত্ব দিয়েছে, সেটি তো দুই দফা গার্ড অব অনার দেওয়া দেখলেই বোঝা যায়, এখানে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী চীনের ব্যবসায়ীদের এ দেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে চীনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। তারা আমাদের বলেছে, ভবিষ্যতে চীন আমদানি ও ব্যালেন্স ও ট্রেডের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ঢাকা এবং বেইজিং-এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ৪ জুলাই চীনা প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন সিপিসির কার্যালয় গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং-এর সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে এ চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হয়।
যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওই (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। প্রথমত, দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাদ্যসহায়তা সংক্রান্ত এলওই স্বাক্ষর হয়। এর আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে বলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান।
স্বাক্ষরিত অন্য দলিলগুলো হলো- ১. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্যসংক্রান্ত এলওই। ২. সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ৩. ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদের তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। ৪. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ৫. বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি। ৬. ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ৭. পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ৮. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট। ৯. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply