
গত আগস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল রাখাইনে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এবার মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের জানাবেন, তাদের ফিরিয়ে নিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে মিয়ানমারের কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গারা একে অন্যের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবে বলে ভাবা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা নিয়ে চলতি মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বাংলাদেশ। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকটি ঢাকা বা কক্সবাজারে হতে পারে। বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে। তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যেতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এব্যাপারে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এ মাসের শেষ সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠক হবে। এ বৈঠকের সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে কক্সবাজার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে জাতিসংঘ সম্প্রতি গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ অন্তত ছয় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার জন্য আলাদা প্রক্রিয়া গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এমন এক প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেনতেনভাবে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য চীন উঠেপড়ে লেগেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি আবারও দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জোর দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমা কয়েকজন কূটনীতিকও চীনের এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছেন।
দেশি–বিদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দ্বিপক্ষীয় বিষয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা যে হয়েছে সেটা প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যাকে শুধু দ্বিপক্ষীয় মোড়কে দেখার অবকাশ নেই।
এটি অনিবার্যভাবে আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে এটি যে আন্তর্জাতিক বিষয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চীন বারবার বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় মোড়কে উপস্থাপনের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply