
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয় গত শুক্রবার। দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা ও এ সমস্যায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছিল এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। অন্তত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমনটাই আশা করা হয়েছিলো।
নির্যাতিত অসহায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়। সেসব এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়দের জন্যেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় না। এর মধ্যে নবাগতদের চাপ মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো। সেসব এলাকার আইন শৃঙ্খলা অবনতি ঘটে। বিপর্যয় ঘটে পরিবেশ পরিস্থিতিরও। গাছ-পালা কেটে, পাহাড় ধ্বংস করে স্থায়ী বসত-বাড়ি গড়ে তোলে বহু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয়দের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে পড়ে রোহিঙ্গা গোষ্ঠী। জড়িয়ে পড়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। বেশ কয়েকটি স্থানে নেশাদ্রব্য পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে তারা।
এমতাবস্থায় মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের মন্ত্রীদের এই বৈঠক ছিল বিশেষ গুরুত্ববহ ও তাৎপর্য পূর্ণ। বাংলাদেশ বরাবরই মিয়ানমারকে অনুরোধ জানিয়ে এসেছিল, বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত নেবার জন্য। মিয়ানমার পালটা অভিযোগ করে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত দেবার জন্যে আশানুরূপ সহায়তা করছে না। অপরদিকে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে, রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য এখনো উপযুক্ত করে তোলা হয় নি। সেখানে ফিরে গেলে এখনো তাদের মানবাধিকার লংঘন করা হতে পারে।
উদ্ভুত জটিল পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সাথে এই বৈঠকের দিকে চেয়ে ছিলেন নীতিনির্ধারকেরা। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আশানুযায়ী অন্য সব বিষয়ের চেয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বৈঠকে। প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় প্রায় ছয় হাজারের মতো রোহিঙ্গা আটকে রয়েছে। তাদের ফেরত নেবার কথা বলেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে এসে পড়া মোট প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা ফিরিয়ে দেবার পদক্ষেপও শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রথম বারে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা তালিকা দেয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর থেকে মাত্র আট হাজারের তালিকা কেন দেয়া হল, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। দেখা গেল, সবাইকে ফেরত পাঠানোর পর যদি ওখানের পরিস্থিতিতে আবার তারা ফিরে আসা শুরু করে, তাহলে তো কোনও লাভ হবে না’।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এখনো প্রবেশ করছে। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো বা রাতের আধারে চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে এসে ভিড়ছে তারা। এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে এই বিশাল অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের জন্যে বোঝা এবং হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়বে, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply