
নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দুই উপজেলার আ’লীগের নেতৃবৃন্দেও একাংশ। শনিবার দুপুরে বড়াইগ্রামের বনপাড়াস্থ আ’লীগ আঞ্চলিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা আ’লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের (একাংশের) যৌথ আয়োজনে এবং জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন চান্দাই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আ’লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান জিন্নাহ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস আ’লীগের রাজনীতি করেন না। তিনি বিএনপি-জামায়েত ও তার একান্ত অনুসারীদের নিয়ে ‘কুদ্দুসলীগ’ গঠন করেছেন। আর তার এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার সম্পদের হিসাব দুদক কর্তৃক তদন্ত হলে সব প্রমাণিত হবে এবং এর ফলে তিনি মনোনয়ন আশা করলেও তাতে নিশ্চিত বিফল হবেন।
গত ইউপি নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, বড়াইগ্রামের গোপালপুর, চান্দাই, মাঝগাঁও ইউনিয়ন ও গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নে সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে আ’লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনীত প্রার্থীকে পরাজয় ঘটান। ওই সময়ের ওই ঘটনার কারণে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঘটে। কুদ্দুস বাহিনীর লোকজন কয়েকটি গ্রামে বাড়ি-ঘরে হামলা চালায়। হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয় চান্দাই ইউপি’র চান্দাই গ্রামের আবুল কালামের।
গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আব্দুল কুদ্দুস এমপি’র মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থী কেহই বিজয়ী হতে না পারার ব্যাখ্যা হিসেবে বক্তব্যে বলা হয়, এমপি আব্দুল কুদ্দুসের গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় তথা তার নেতৃত্বে পোড়া গন্ধ ছড়ানোর কারণে নেতা-কর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে মনোনয়ন দিলে এই আসন ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে তিনি ব্যতিত অন্য যে কেউ মনোনয়ন পেলে কমপক্ষে এক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে দেয়ার চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং গুরুদাসপুর পৌর মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা এই দুই হেভি ওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশীর কথা তুলে ধরে বলা হয়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি আব্দুল কুদ্দুস নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও কোন সুবিধা করতে
পারেনি। এই নির্বাচনে ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। সংসদ সদস্যের লোকজন বিভিন্ন সময় ওই দুই নেতার সৌজন্যে তৈরী করা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছামূলক ও সরকারের উন্নয়ন চিত্র সম্বলিত শত শত পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও ধ্বংস করেছে। এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন
সময় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে। এমপি আব্দুল কুদ্দুস জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েও তার সংসদীয় এলাকায় সংগঠনের ভিত্তি তৈরী করতে পারেনি। বরং সংগঠনের মধ্যে অশান্তি, নৈরাজ্য তৈরী করে রেখেছে। যার প্রতিফলন ঘটবে আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দিলে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ সদস্য ও গোপালপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক, গুরুদাসপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুল বারী, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য সরদার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, মাঝগাঁও ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি খোকন মোল্লা, নাজিরপুর ইউনিয়ন আ’লীগের
সভাপতি আইয়ুব আলী প্রমূখ। এ সময় জেলা পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ, দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা আ’লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি সদস্য ও সুধী সমাজ উপস্থিত ছিলেন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সেল ফোনে একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/ আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply