
বুড়িগঙ্গায় চলাচলে বিভিন্ন সময়েই হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এবার তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার স্থানীয় বাসিন্দারা কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ তৈলঘাট এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন থেকে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিজেন্ড গ্রুপের আয়োজনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বুড়িগঙ্গায় স্বজনরা হারানো পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়াদের মধ্যে একজন আকাশ (২৮)। শুক্রবার রাতে বুড়িগঙ্গায় ডুবে মৃত্যু হয়েছে তার মা-বাবা, ছোট ভাই ও চাচির। লালকুঠি ঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের তৈলঘাটে আসার সময় লঞ্চের ধাক্কায় খেয়া নৌকা ডুবে মারা যান আকাশের বাবা মতিউর রহমান (৫০), মা রোজিনা বেগম (৪২), ছোট ভাই আসিক (৫) ও চাচি মমতাজ বেগম (৪৮)। খেয়া নৌকায় আকাশও ছিলেন। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আকাশ বলেন, আমার মতো আর কারও ক্ষেত্রে যেন এমন না ঘটে। সেদিন আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। তিনি আরও বলেন, বুড়িগঙ্গায় চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা পারাপার হচ্ছে। অথচ এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন জানান, দিনের বেলা বুড়িগঙ্গায় বলগেট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে এসব নৌযান চলছে। সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী নামানোর পর লঞ্চগুলো বুড়িগঙ্গায় এলোমেলো করে পার্কিং করে রাখা হয়। এতে নৌযান চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। লঞ্চের পার্কিংয়ের জন্য সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। সেখানে পার্কিং করলে দিনে লঞ্চগুলোকে মাত্র ২০০ টাকা দিতে হয়। এ টাকা বাঁচানোর জন্য লঞ্চের লোকজন সদরঘাটের দুই পাশে ভিড়িয়ে রেখে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও খেয়া নৌকার যাত্রীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এসে যাত্রীদের ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে সর্বস্ব ছিনিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। এসব কারণে বুড়িগঙ্গায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সদরঘাট এলাকার গভর্মেন্ট মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রানা। তার বাসা কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায়। রানা জানায়, বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে তাকে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। তার মতো হাজারও শিক্ষার্থী এভাবে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। কিছুদিন আগে খেয়া নৌকায় থাকা দুই শিক্ষার্থী বলগেটের ধাক্কায় ডুবে মারা গেছে। প্রতিদিন এমন ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে ভয়ে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেয় শিক্ষার্থীরা।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পারাপার হচ্ছে বুড়িগঙ্গা। এ ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারে প্রশাসনিক কিছু উদ্যোগ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply