
দিন-রাত নগরবাসীকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে মশা। দিনে রাতে টানিয়ে রাখতে হচ্ছে মশারী, জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে কয়েল দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আয়তনে বড় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। উত্তর সিটিতে মশার প্রকোপ বেশি হলেও এ খাতে সংস্থাটির বরাদ্দ দক্ষিণের চেয়ে কম।
ডিএনসিসি’র গুলশান-বনানী ও বারিধারা এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মশা নিধন করে থাকেন। এরপরেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কয়েল ও মশারি টানিয়ে নগরবাসী মশা মোকাবেলা করলেও ডেঙ্গু মশা নিয়ে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় মশার বিষয়ে তথ্য জানাতে হটলাইন চালু করছে ডিএনসিসি। এই উদ্যোগকে নিজেদের সঙ্গে মশকরা হিসেবেই দেখছেন নগরবাসী।
মশার দাপটে অতিষ্ঠ নাগরিকরা বলছেন, মশার বিষয়টি এমন নয় যে, এটা নির্ধারিত কোনও বাড়ি বা এলাকাভিত্তিক সমস্যা। রাজধানীজুড়েই মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের উচিত হবে বিশেষ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে একযোগে মশা নিধন শুরু করা। কিন্তু তা না করে হটলাইন চালুর সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়। এর অর্থ হচ্ছে, যেখান থেকে ফোন আসবে, কেবল সেখানেই ওষুধ ছিটানো হবে। আর যারা ফোন করতে পারবে না, তারা এ সেবা পাবে না।
মশার উপদ্রব অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি একটি হটলাইন চালু করেছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ডিএনসিসিভুক্ত যেকোনও এলাকায় মশার উপদ্রবের খবর জানানো যাবে ০১৯৩২৬৬৫৫৪৪ নম্বর হটলাইনে। কোনও এলাকা বা বাড়িতে মশার উপদ্রব দেখা দিলে এই হটলাইনের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে খবর জানানো যাবে। পরে ডিএনসিসির কর্মীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বাড়ি বা এলাকায় ওষুধ ছিটিয়ে আসবে। ডিএনসিসি জানিয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। এই প্রোগ্রামটি ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া কথা থাকলে আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে মশা নিধনে ডিএনসিসি’র ক্র্যাশ প্রোগ্রামের ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও এর কোনও সুফল পায়নি নগরবাসী। উপরন্তু, মশার উৎপাত আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বলেন, ‘মশার বিষয়ে খবর জানাতে আমরা হটলাইন চালু করেছি। আমরা সফল কিনা তা বলা যাবে না। এর মাধ্যমে তারা আমাদের থেকে সেবা নিতে পারবেন। হটলাইন সেবাটি সবেমাত্র শুরু হয়েছে।’ মশার জন্য হটলাইন সেবা প্রয়োজন আছে কিনা, কিংবা এর সুফল পাওয়া যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা নাগরিকদের সুবিধার জন্যই চালু করেছি। আশা করি, এর মাধ্যমে তারা সুফল পাবেন। অন্তত পক্ষে এর মাধ্যমে নাগরিকরা আমাদের কাছে তাদের অভিযোগটি জানাতে পারবেন। আমাদেরও যে কার্যক্রম চলছে, সে সম্পর্কেও তাদের ধারণা হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি বলেন, তার এলাকায় ওষুধ ছিটানো হয়নি, তখন আমরা গিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে আসব।’
বেসরকারী একটি কোম্পানির কর্মকর্তা মনজুরুল কবির থাকেন বনানীর একটি ফ্ল্যাটে। তিনি বলেন, ‘৯ বছর ধরে বনানীতে থাকি। এ সময়ে কোনও দিন মশক নিধন কর্মীদের চোখে পড়েনি আমার। বাসা কিংবা অফিসে স্প্রে করার পরেও মশার কামড় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। বাসায় আসলে তো মশারি টাঙ্গিয়ে থাকায় যায়, অফিসে তা সম্ভব না।’
আফতাব নগরের বাসিন্দা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনও দিন কেউ মশক মারতে আসেনি। মশা মারতে হটলাইনে ফোন দিয়ে খবর দিতে হবে কেন? সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্সগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে আসি। তাই তাদের (সিটি কর্পোরেশন) উচিত হবে নিজ উদ্যোগে এসে আমাদের সেবা দিয়ে যাওয়া।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ ডিএনসিসির একজন কাউন্সিলর বলেন, ‘এটা কি চিকুনগুনিয়া রোগ যে, হটলাইনে ফোন করলে ডাক্তার এসে ওষুধ ও চিকিৎসা দিয়ে যাবে? এটা এলাকাভিত্তিক সমস্যা। সিটি কর্পোরেশনকে সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। হটলাইনে ফোন করে নগরবাসীর বাসা-বাড়িতে মশককর্মী আনা নগরবাসীর সঙ্গে মশকরা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির কয়েকজন মশক সুপারভাইজার বলেন, কেউ ফোন করলে তার বাড়িতে গিয়ে স্প্রে করলে মশা নিধন হবে না। হয়ত তাৎক্ষণিক একটা সুফল আসবে। কিন্তু যদি আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে স্প্রে করা না হয়, তাহলে এক-দুই ঘণ্টা পর পাশের ভবন থেকে ওই বাড়িতে আবার মশা চলে আসবে। ফলে হটলাইন কোনও কাজে আসবে না। বরং আমাদের উচিত হবে একদিনে দুই-তিনটি ওয়ার্ড করে একযোগে ফগিং করা। তাহলে মশা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়া যাবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply