
গত বছর থেকে চলমান সহিংসতায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরপর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি প্যানেল গঠন করা হয়।
এই আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেল তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির কাছে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। গতকাল শুক্রবার মিয়ানমার টাইমস এ খবর জানায়।
প্যানেলের ১২ দফা সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো;
১) কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত বাস্তবায়ন,
২) একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন জাতীয় উদ্যোগে গঠন,
৩) কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কাজ পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি,
৪)যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের উদ্যোগ,
৫) সহিংসতা কবলিত এলাকায় সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের অনুমতি এবং রাখাইন এলাকায় উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি করা।
রাখাইনের সংকট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৫ সদস্যের ‘রাখাইন পরামর্শক প্যানেল’ গঠন করা হয়। প্যানেলটি গঠনের পর শুরুতেই হোঁচট খায়। মার্কিন রাজনীতিবিদ বিল রিচার্ডসন পদত্যাগ করলে ক্রমেই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকে প্যানেলটি।
পরে জুলাই মাসে প্যানেলটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করা সাবেক থাই কূটনীতিক কবসাক চুটিকুলও পদত্যাগ করেন। এতে সংশয়ের মুখে পড়ে প্যানেলটির কার্যকারিতা। অবশেষে ৩ সদস্যের পরামর্শক প্যানেল তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ মিয়ানমার সরকারের কাছে দাখিল করে।
এদিকে পরামর্শক প্যানেলের সুপারিশমালা মিয়ানমার সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্যানেলের প্রধানের দায়িত্বে থাকা থাইল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ত সাথিরাথাই।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।
ওই সময়ে প্রাণভয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন নয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
ইতিহাসের এই জঘন্যতম নৃশংসতায় অন্তত ২৪ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারায়। ধর্ষণের শিকার হয় অন্তত ১৮ হাজার নারী। রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে প্রকাশিত ‘ফোর্সড মাইগ্রেশন অব রোহিঙ্গা : দ্য আনটোল্ড এক্সপেরিয়েন্স (জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা : অব্যক্ত অভিজ্ঞতা)’ বইয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত বুধবার লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা সংকট : বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক বিশেষ অধিবেশনে গবেষণা গ্রন্থটি উপস্থাপন করা হয়। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তিন হাজার তিন শ রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণা গ্রন্থটি তৈরি করা হয়েছে।
জাতিগত ভাবে নিধন করা কখনো সন্ত্রাস নিরমূলের মাধ্যম হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে সন্ত্রাসীদের তদন্তের মাধ্যমে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে এদের। তা করা না গেলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply