
আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে পদ্মার বুকে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চ। এর পর কেটে গেছে চারটি বছর। দুর্ঘটনার এতগুলো দিন পার হলেও এখনও সেই স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় নিহতদের স্বজনদের।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সন্তান ও স্বজন হারা পরিবারগুলো সেই দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় দুই সন্তান হারানো তারা মিয়া, দুই মেয়ে হারানো নূরুল হক ও ছেলে হারানো আব্দুল আজিজ মাতুব্বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তারা সন্তানের স্মৃতি আকড়ে বেঁচে আছেন।
পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত নূর আলম ও নিখোঁজ শাহেনূরের মা গোলেনুর বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার জোড়ের কইতর দুইজন হারিয়ে গেছে। পিঠাপিঠি ভাই-বোন। আহারে,মৃত্যুর সময় ওরা কতই না কষ্ট পেয়েছে। সুযোগ থাকলে ডানা মেইলা ওদের কাছে উইড়া যাইতাম।’
তিনি আরও বলেন,‘ছেলের লাশ পাওয়ায় প্রশাসন থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। মেয়ে লাশ না পাওয়ায় নিহতের তালিকায় নাম উঠেনি।’
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচু মাদবরের কান্দি গ্রামের ইউসুফ মিয়া ঢাকা কলেজে রসায়ন বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে ছাত্র ছিলেন। বাড়ি থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দিন কাটে কান্না আর হাহাকারে। সন্তান হারানোর শোকে কাতর বাবা আব্দুল আজিজ মাতুব্বর বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় বসে সন্তানের চলার পথের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন, কোনও কথা বলতে পারেন না।
নিহত ইউসুফ মিয়ার চাচাতো ভাই মাসুদ মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। এমন মেধাবী সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা এখন অসহায়। ’
পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নূরুল হকের মেয়ে স্বর্ণা ও হীরা এবং তাদের খালাতো বোন লাকী পিনাক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। শোকে কাতর এই পরিবার এখন কারো সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা পর্যন্ত বলে না।
এছাড়াও নিহত হয় শিবচরের লপ্তেরচর এলাকার মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তান। মৃত্যু হয় সন্নাসীরচর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফরহাদ মাতুব্বর, তার স্ত্রী শিল্পী, এক বছর বয়সী সন্তান ফাহিম এবং শ্যালক বিল্লালের।
এছাড়া কালকিনি উপজেলার ডাসার ইউপি চেয়ারম্যান সবুজ কাজী হারিয়েছেন তার মা হিরননেছা বেগম, স্ত্রী তিসা ময়না এবং ৯ মাস বয়সী ছেলে তৌফিককে। নিহত ও নিখোঁজ সব পরিবারের কাছে এই দিনটি বিভীষিকাময় এক স্মৃতি হয়ে আছে।
লঞ্চ দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পর অত্যাধুনিক ছোনার স্ক্যানার যন্ত্রের সাহায্যে খোঁজ করে ব্যর্থ হওয়ার পর আর কোনও অনুসন্ধান করেনি বিআইডব্লিউটিএ।
স্থানীয়দের ধারণা, লঞ্চটি উল্টে গিয়ে পদ্মার তীব্র স্রোতের তোড়ে অনেক দূরে ভাটিতে চলে গেছে। এক সময় বালুর আস্তরণ পড়ে পদ্মার বুকেই বালুর নিচে চাপা পড়েছে।
একটি লঞ্চ দুর্ঘটনা অসংখ্য মানুষের কান্না বয়ে নিয়ে চলে সারা জীবন। সড়কের নৈরাজ্যতা রোধ করতে শিক্ষার্থীরা আজ রাস্তায় নেমেছে। নানা অনিয়মে ডুবে যাওয়া লঞ্চ খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতেও কি সেই ছাত্রদেরই এক হতে হবে? সে উত্তর দেবে সময়ই।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply