
‘জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এর বাস্তবায়ন কখনও হয় না। একটি নয় দুটি নয় দীর্ঘ ১৯টি বছর কেটে গেছে আমাদের কিন্তু এ রাস্তাটি আগের মতোই জরাজীর্ণ রয়ে গেছে। আমাদের কি অপরাধ? আমাদের কি ভালো রাস্তা দিয়ে চলার অধিকার নেই?’ এমন করেই আক্ষেপের কথা জানাচ্ছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দারা।
কারণ ২০০০ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও মাছখোলা থেকে সাতক্ষীরা পৌর সদরে আসার প্রধানতম রাস্তাটির বেহাল দশার উন্নতিতো হয়নি বরং রাস্তাটি এখন প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে এলাকাবাসী স্বেচ্ছা শ্রমে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু করেছে। বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। আর এ কাজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাছখোলার ‘প্রত্যাশা’ ক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দিন ঢালী। তিনি এবং তার ক্লাবের উদ্যোগেই মূলত সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে ‘প্রত্যাশা’ ক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দিন ঢালী ‘দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৯ বছর যাবৎ মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে মাছখোলা বাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা গ্রামবাসীরা একাধিকবার রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু এর কোন সুরাহা হয়নি। অবশেষে কোন উপায় না দেখে আমরা নিজেরাই রাস্তাটি সংস্কার করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি খরচে রাস্তা সংস্কার হলে যেমন পাথর এবং পিচ দিয়ে কার্পেটিং করা হয় সেভাবে সংস্কার করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা আমাদের নেই। তাই সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা ইট, খোয়া এবং বালু দিয়ে রাস্তার ছোট-বড় গর্তগুলি ঢেকে রোলার দিয়ে সমান করে দিচ্ছি। যাতে কোন রকমে এলাকাবাসী চলাচল করতে পারে।’
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে মাছখোলা বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তাটির সম্পূর্ণ অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় গর্তের। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল খুবই দূরহ।
মাছখোলা এলাকার বাসিন্দা মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে, দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিতে চাইলেও কোন গাড়িওয়ালা এ রাস্তায় যেতে চাই না। এলাকার কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়না। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না। বর্ষাকালেতো রাস্তায় নৌকা চালালে ভালো হয়।’
রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণ উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে এ রাস্তাটি প্লাবিত হয় এবং এ রাস্তা দিয়ে শেষ প্রান্তে ‘এবি ব্রিক্স’ এবং ‘এজে ব্রিক্স’ নামের দুটি ইটভাটা আছে। প্রতিনিয়ত ভাটার পরিবহন কাজে ব্যবহৃত ট্রাক, ট্রলিসহ অন্যান্য ভারী বাহন রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করে। ফলে রাস্তাটির এমন বেহাল দশা।
স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক সংস্কার কাজে আসা আবদুল গণি, আবদুল হাকিম, রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এমপি মহোদয় আমাদের গ্রামে আসলে আমরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি সেসময় ফুল না নিয়ে বলেছিলেন যত দিন এই রাস্তা সংস্কার করতে পারবো না ততদিন আমি কোন ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করবো না।’
মাছখোলাবাসীর বিশ্বাস খুব দ্রুতই সংসদ সদস্য রাস্তাটি সংস্কারে নজর দিবেন এবং গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply